ইনফো ন্যাশন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা ব্যবসা বাণিজ্য স্বাস্থ্য প্রযুক্তি নির্বাচন আরও

৮ জেলায় ভয়াবহ বন্যা; আরও খারাপ হতে পারে পরিস্থিতি

     আগ 22, 2024

ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশের আটটি জেলা বন্যার কবলে পড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন নতুন জেলা ও অঞ্চলে বন্যার বিস্তার ঘটতে পারে।

Similar topics for you...
This topic continues below.

অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ৫ লাখ, আহতরা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে পাচ্ছেন
বছরের শেষনাগাদ এডিবি বাজেট সহায়তা দিবে ৪০০ মিলিয়ন ডলার, অর্থ উপদেষ্টা
আরব আমিরাতে দণ্ডপ্রাপ্ত সেই ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করেছেন প্রেসিডেন্ট

ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা ঢলের কারণে দেশের আটটি জেলা বন্যার কবলে পড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যা নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা এ তথ্য জানিয়েছেন। 

তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতে ও এলাকা গুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আশরোফা ইমদাদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।

[উপদেষ্টা নাহিদ।  ছবি: সংগৃহীত ]

এ বিষয়ে উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার ১৩ শতাংশ সাইট বর্তমানে ডাউন আছে। 

কিছু উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ড্যামেজের কারণে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎও চলে গেছে বেশ কিছু এলাকায়। তিনি আরও জানান, নেটওয়ার্ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ১০টি ভি-স্যাট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পুনরায় চালু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 

বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য: 
 

খাগড়াছড়ি

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চরম দুর্যোগের সম্মুখীন খাগড়াছড়ি।  রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে গ্রাম থেকে শহর সবকিছু প্লাবিত হচ্ছে।  মেরুং ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি ঢুকছে। প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালার তিন ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম ও।   খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

পৌর শহরের বাসিন্দা আরাফুল ইসলাম বলেন, “গত ১০ বছরে এত পানি দেখা যায়নি। সাধারণত শহরের মধ্যে পানি ওঠে না, কিন্তু এবার শহরের প্রধান সড়কগুলোও ডুবে গেছে।”

স্থানীয় মো. বেলাল হোসেন বলেন, খাগড়াছড়ি সদরের প্রায় তিন হাজার পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে অনেকেই নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছেন।

ছবি: সংগৃহীত 

নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মেরুং বাজারও ডুবে গেছে।

মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা জানান, “বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। মাইনী নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।”

জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ১৮টি সহ পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনা খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটিতে টানা বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২০টি স্পটে পাহাড়ধস হয়েছে, তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে। পরে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মাটি সরিয়ে যান চলাচল পুনরায় শুরু করেন।

ছবি: সংগৃহীত 

জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে বেড়াতে আসা ২৫০ পর্যটক সেখানে আটকে পড়েছেন। কাচালং নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ প্লাবিত হওয়ায় পর্যটকরা গতকাল থেকে আটকা পড়েছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকদের বিকল্প পথে সরানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আজও তাদের সাজেকেই থাকতে হবে। উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল, কিন্তু রাতের বৃষ্টিতে আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম 

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ জহিরুল ইসলাম এই পূর্বাভাস জানান।   

ব্যাপক বৃষ্টিপাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন জেলার পাঁচটি উপজেলার অন্তত আড়াই লাখ মানুষ।

ছবি: সংগৃহীত 

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, মেহেদীবাগ, চকবাজার, বাকলিয়া ডিসি রোড, তিন পোলের মাথা এবং হালিশহরসহ বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টি ও হালদা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, রাউজান এবং হাটহাজারীতে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।  

কুমিল্লা

[নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছেন কুমিল্লার মানুষ । ছবি: সংগৃহীত ]

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গ্রামগুলোর হাজার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। নালগড় গ্রামের শত শত মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে পায়ে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যাচ্ছেন। 

তবে মহাসড়ক থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরের এই গ্রামে এমন কোনো নিরাপদ জায়গা নেই, যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারবেন, জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতা।

উপজেলার চানপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন তার গ্রামের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “অবস্থা খুব খারাপ। আমার নতুন ঘর, ভাইঙ্গা সব শেষ।”

মাথায় মুরগির খাঁচা নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আনোয়ার হোসেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কুমিল্লার লালমাইয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার কিছুই নেই এখন, আমার কিছুই নেই… ঘরের ভিত ভাইঙ্গা গেছে।”
 

ফেনী 

বন্যা ছড়িয়ে পড়ছে ফেনী ও আশেপাশের অঞ্চলেও। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বন্যাকবলিতদের উদ্ধারে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কাজ করছেন এমনকি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরাও। 

ছবি: সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে জানা গেছে, ফেনীতে উদ্ধার কাজের জন্য তিনটি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে। আগের একটি কন্টিনজেন্টের পাশাপাশি আজ থেকে আরও দুটি কন্টিনজেন্ট যুক্ত হয়েছে।

পোস্টে জানানো হয়, নৌবাহিনীর আরও দুটি কন্টিনজেন্ট ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ফেনীতে গিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। উদ্ধারকার্যে ডুবুরি সামগ্রী, লাইফ-জ্যাকেট, স্পিড বোট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা সেবা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।





 

Share on

পাঠান

Subscribe Now

Keep updated with the latest news!